বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:২১ অপরাহ্ন
গোবিন্দগঞ্জ প্রতিনিধিঃ গোবিন্দগঞ্জে মুড়িকাটা পেঁয়াজের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। অনুকুল আবহাওয়া আর সময়মত সার, সেঁচ ও সঠিক পরিচর্যা করায় চলতি বছরে উৎপাদিত পেঁয়াজের ভাল ফলনের আশা করছেন চাষীরা। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার পেঁয়াজ চাষে ব্যয় বাড়লেও ভালো ফলন আর কাঙ্খিত বাজারমূল্যে আর্থিক লাভবান হওয়ার আশা করছেন এ উপজেলার পেঁয়াজ চাষিরা।
জানা গেছে, চলতি মৌসুমে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামারদহ, গুমানীগঞ্জ, কোচাশহর, দরবস্ত, সাপমারা, হরিরামপুর, নাকাই, রাখাল বুরুজ, শিবপুর ও তালুককানুপুর ইউনিয়ন এবং পৌরসভাসহ করতোয়া নদী তীরবর্তী এলাকার কৃষকরা মুড়িকাটা পেঁয়াজের চাষ করেছেন। আগের বছরগুলোর তুলনায় এবছর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের চাষ বেড়েছে। আশ্বিন ও কার্তিক মাসে মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণ করা হলেও তা উঠানো শুরু হয় অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে। শীতের শুরুতে পাতাসহ পেঁয়াজ বিক্রি হলেও পরে পেঁয়াজের গুটি বড় হওয়ায় মুড়ি কেটে তা বাজারে বিক্রি করেন চাষিরা। এ বছর বাজারে পেঁয়াজের মূল্য ভালো থাকায় পেঁয়াজ চাষে আর্থিক ভাবে লাভবান হবেন বলে আশা করছেন চাষিরা। বীজ,সার ও তেলসহ কৃষি উপকরণ ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে পেঁয়াজ চাষে খরচও বেড়েছে। পেঁয়াজ চাষীরা বলছেন, অনুকুল আবহাওয়া আর সঠিক সময়ে জমিতে সার, সেঁচ, পরিচর্যা ও রোগ বালাই দমনে কীটনাশক স্প্রে করায় এবার মুড়িকাটা পেঁয়াজের আশাব্যঞ্চক ফলন হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে কাঁচা পাতাসহ প্রতি মণ পেঁয়াজ ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২শ’ টাকা দরে বিক্রি হয়। কিন্তু বর্তমানে বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজ মানভেদে ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সার ও তেলের দাম বাড়াসহ চড়া মূল্যে গোটা পেঁয়াজের বীজ কিনে ফসল আবাদ করায় ফসলের উৎপাদিত খরচ অনেকটা বেড়েছে বলে কৃষকরা জানান।
উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের গোশাইপুর গ্রামের সোহরাব হোসেন বলেন, শুরুতেই বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম বেশ ভালো ছিল। পরে দাম কিছুটা কমে গেলেও বর্তমান বাজারে পেঁয়াজের দামে আমি সন্তোষ্ট। এ বছর ২ বিঘা জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ করেছি। কাটাবাড়ী ইউনিয়নের মেরী গ্রামের বাবলু মিয়া জানান, গত বছর ৫০ (দেড় বিঘা) শতাংশ জমিতে প্রায় দেড় লাখ টাকার পেঁয়াজ বিত্রিু করেছিলাম। কিন্তু এবার সার, বীজ ও শ্রমিক মজুরি অনেক বেশি। এবার ৫০ (দেড় বিঘা) শতাংশ জমিতে পেঁয়াজ চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ৯০ হাজার টাকা। বাজারে দাম ভালো-তাই এবারে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার পেঁয়াজ বিত্রিু করবো বলে আশা করছি।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ মেহেদী হাসান বলেন, এ বছর গোটা উপজেলায় ৫৩ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেয়াঁজের চাষ হয়েছে- যার হেক্টর প্রতি গড় ফলন ৩ থেকে ৪ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় মুড়িকাটা পেঁয়াজের চাষ বৃদ্ধি করতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পেঁয়াজের ফলন বাড়াতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এজন্য মাঠ পর্যায়ে প্রান্তিক চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে কাজ করছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। তিনি আরও জানান, মুড়িকাটা পেঁয়াজ বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায়না। আর বাজারে একসাথে সরবরাহ বাড়ার কারণে বর্তমানে দাম কিছুটা কম পাচ্ছেন পেঁয়াজ চাষিরা। ধান, গম ও চালসহ অন্যান্য কৃষি পণ্যের দাম নির্ধারণ এবং সরকারীভাবে সংগ্রহ করা হলেও পেঁয়াজের ক্ষেত্রে সে ব্যবস্থা নাই। মৌসুম শেষে এ উপজেলায় মুড়িকাটা পেঁয়াজের চাষ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ।